গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়। মাঠ পর্যায়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮১ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠন করা হয়। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পাঁচটি উইং এর মধ্যে পরিকল্পনা উইং একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উইং। একটি কথা প্রচলিত আছে যে, “বয়স্ক ব্যক্তিরা ইতিহাস লিখেন কিন্তু যুবসমাজ ইতিহাস তৈরী করে।” যুবসমাজই একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ তাই অপরিহার্য। উন্নয়নের রিলে রেসে যুবসমাজই বয়স্কদের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। যুবসমাজের আত্মপ্রত্যয় ও গতিময়তাকে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও কাজে লাগাতে পারলে উন্নয়নের গতিপথ হয় পরিশীলিত ও সতেজ। যুবসমাজকে তাই জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি স্তরে সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। জাতীয় যুবনীতি অনুসারে বাংলাদেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠিকে যুব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ বয়সসীমার জনসংখ্যা ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী ৫ কোটি ৫০ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৭২ জন যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। জনসংখ্যার প্রতিশ্রুতিশীল, উৎপাদনমুখী ও কর্মপ্রত্যাশী এই যুবগোষ্ঠিকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশের জনসংখ্যার সম্ভাবনাময় এ অংশকে জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করে তাদের মাঝে গঠনমূলক মানসিকতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত করার অনুকূল ক্ষেত্র তৈরীর উদ্দেশ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনা উইং শুরু থেকেই বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে যাচ্ছে।
পরিকল্পনা উইং এর কার্যাবলীঃ
পরিকল্পনা উইং-র কার্যক্রমের সাফল্যঃ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনা উইংর মাধ্যমে প্রণীত প্রকল্পসমূহের মধ্যে ২৪টি প্রকল্প ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে এবং ১১টি প্রকল্প চলমান আছে। সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের আওতায় জেলা পর্যায়ে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, বগুড়া আঞ্চলিক যুব কেন্দ্র এবং ৪টি আঞ্চলিক মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের নিমিত্ত মোট ২১০.৩১ একর জমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় ইতোমধ্যে ৬৪টি আবাসিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি আবাসিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫ তলা অফিস কাম একাডেমিক ভবন, ২য় তলা কর্মকর্তা ও ৩য় তলা কর্মচারীদের বাসস্থান, ৫ তলা ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস, ডাক কাম পোল্ট্রি শেড, কাউ শেড, মৎস্য হ্যাচারী, পুকুর, নার্সারী ইউনিট এবং খেলার মাঠ রয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্রে ৭০০ আসন বিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক অডিটরিয়াম, একটি আন্তর্জাতিক মানের হোস্টেল, একটি প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে তিনটি বাসভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে পৃথক ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টার, লাইব্রেরী, জিমনেসিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, গাড়ী রাখার গ্যারেজ ও অন্যান্য অবকাঠামো, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি তিন তলা প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবন এবং একটি তিন তলা হোস্টেল, বগুড়া আঞ্চলিক যুব কেন্দ্রে একটি প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবন, হলরুম, কর্মকর্তাদের বাসভবন, কর্মচারীদের বাসভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে পৃথক ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস, মেডিকেল সেন্টার, লাইব্রেরী, জিমনেসিয়াম, গাড়ী রাখার গ্যারেজ ও অন্যান্য অবকাঠামো এবং ৪টি আঞ্চলিক মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি তিন তলা প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবন এবং উক্ত ভবনের তিন তলায় হোস্টেল রয়েছে। সমাপ্ত যুব প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় ২৮টি জেলায় সহকারী পরিচালকের কার্যালয় (পরবর্তীতে উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে উন্নীত), ৪৭৬টি উপজেলায় উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, ৬৪টি জেলায় ৬৮টি পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৯টি জেলায় ব্লক ও বাটিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৩২টি জেলায় স্টেনো টাইপিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পরবর্তীতে মডার্ণ অফিস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটার এ্যাপ্লিকেশন কোর্সে রূপান্তর) স্থাপন করা হয়েছে। বেকার যুবদের কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রকল্প (২য় পর্ব ) এবং অবশিষ্ট ৪১টি জেলায় ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজ ওয়্যারিং, ৫৫টি জেলায় ইলেকট্রনিক্স, ৫৫টি জেলায় এয়ার কন্ডিশনিং এন্ড রেফ্রিজারেশন প্রশিক্ষণ কোর্স স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪টি জেলায় (ক) কম্পিউটার ট্রেডে ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্কিংসহ কম্পিউটার বেসিক কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৭০টি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্স কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৬টি বিভাগে ৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (খ) ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজ ওয়্যারিং (গ) রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার- কন্ডিশনিং এবং (ঘ) ইলেকট্রনিক্স ট্রেডে বেকার যুবদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৬৪টি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র বেকার যুবদের ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে “টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার অন হুইলস ফর আন্ডারপ্রিভিলেজড রুরাল ইয়াং পিপল অব বাংলাদেশ” শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৪টি প্রশিক্ষণ গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। প্রতিটি গাড়িতে ৪০ জনের ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষণের জন্য ১০টি অত্যাধুনিক ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সুবিধা, মালটিমিডিয়া প্রজেক্টর, অডিও সিস্টেম ইত্যাদি রয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রকল্প পরিচালকগণের প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য সমাপ্ত প্রকল্পের আওতায় ৫৬টি মাইক্রোবাস, ১২টি জীপ, ১টি বাস, ১টি মিনিবাস, ১টি কার, ২টি পিক-আপ এবং ২টি মোবাইল ভ্যান গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। চলমান প্রকল্পের আওতায় ৭টি মাইক্রোবাস ও ৩টি জীপ ক্রয় করা হয়েছে। আরো ৪টি মাইক্রোবাস ক্রয় করা হবে। উপজেলায় উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের কাজের সুবিধার্থে দেশের ৪৮৮টি উপজেলায় ২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৮৮টি মোটর সাইকেল প্রদান করা হয়েছে। সকল জেলা ও উপজেলায় অফিস সরঞ্জাম, কম্পিউটার, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার জনবলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষিত ষাট লক্ষাধিক যুবক ও যুবমহিলার মধ্যে অধিকাংশ সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। যুব ঊন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনা উইং বেকার যুবদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করে তাদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের কর্মস্পৃহা এবং কর্মোদ্দীপনা কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেএে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত করার জন্য নতুন নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। যেসকল দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (NGO/INGO) যুববান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সমমনা বা যুবদের উন্নয়নে একই স্বপ্ন দেখে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের (MoU) মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত যুব সমাজকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সাবলম্বী/উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। |